মহাকাশ চর্চা বা গবেষণা কি অর্থের অপচয়??? জেনে নিন-


এই প্রশ্নটি আমি হামেশাই শুনে থাকি। অনেক ব্যক্তিই মনে করেন যে যেখানে দেশে ও পৃথিবীতে এত দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগব্যাধি তখন মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশে যান পাঠানো ইত্যাদি অর্থের অপচয়- বিলাসিতা মাত্র। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং এই প্রশ্ন ওঠার একমাত্র কারণ হল মহাকাশ গবেষণার প্রয়োজনীয়তা ও প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব।

মহাকাশ গবেষণার প্রয়োজনীয়তাঃ

এর সম্পর্কে লিখে শেষ করাই খুব কঠিন। আমি একটি উন্নয়নশীল দেশের (ভারত) আঙ্গিক থেকে কিছু কথা বলতে চাই (সমগ্র বিশ্বের জন্যও সেইগুলি প্রযোজ্য হবে)।

ভারতের মহাকাশ গবেষণার দায়িত্ব মূলত সামলায় ভারত সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ স্পেস’ এর অধীনে থাকা ‘Indian Space Research Organization’ অর্থাৎ ISRO (যার অধীনে প্রায় ২০ টি গবেষণাকেন্দ্র) সহ প্রায় ৫০ টি গবেষণাকেন্দ্র। ISRO-র vision হলঃ

Harness space technology for national development, while pursuing space science research and planetary exploration.

অর্থাৎ মহাকাশ গবেষণা ও গ্রহ অভিযানের সাথে সাথে উদ্ভূত মহাকাশ প্রযুক্তিকে জাতীয় উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা। এই ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ থেকেই বোঝা যায় ভারতের মহাকাশ গবেষণা শুধু বিলাসিতা নয় বরং প্রকৃত প্রয়োজনীয়তা।

যেইসব ক্ষেত্র মহাকাশ গবেষণায় সরাসরি লাভবান হয়ঃ

১) পৃথিবী পর্যবেক্ষণ (মানচিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তদারকি, সম্পদ নজরদারী, সাগর নজরদারী, দুর্যোগের আভাস পাওয়া ও দুর্যোগের মোকাবিলা ইত্যাদি)

২) সংযোগ (দূরসংযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি)

৩) প্রতিরক্ষা (Defense)
৪) অবস্থান নির্ণয় ও সঠিক পথ নির্ধারণ (Positioning & Navigation)
৫) পরিবহণ (Transportation)
৬) বানিজ্য
৭) আন্তর্জাতিক কূটনীতি (International Diplomacy)

ইত্যাদি।

১) পৃথিবী পর্যবেক্ষণঃ

বর্তমানে রয়েছে ১৭ টি স্যাটেলাইট।
(RESOURCESAT-1, 2, 2A, CARTOSAT-1, 2, 2A, 2B, RISAT-1, 2, OCEANSAT-2, Megha-Tropiques, SARAL, SCATSAT-1, INSAT-3D, INSAT 3A, INSAT -3DR, HysIS).

ক) মানচিত্র তৈরি, সমুদ্র নজরদারী ইত্যাদি: Cartosat series স্যাটেলাইটগুলি এর জন্য ব্যবহার হয়। এরা উচ্চমানের ছবি তোলে যার সাহায্যে গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনা, উপকূল অঞ্চলের পরিকল্পনা, রাস্তা ও জলমার্গ নজরদারী ইত্যাদি অনেক সুবিধাজনক হয়। এইসব ছবি অন্যদেশকে অর্থের বিনিময়ে প্রদানও করা যায়।

জারহার হরিপুর, উত্তরপ্রদেশ (কার্টোস্যাট চিত্র)
জারহার হরিপুর, উত্তরপ্রদেশ (কার্টোস্যাট চিত্র)

দোহা, কাতার (কার্টোস্যাট চিত্র)
দোহা, কাতার (কার্টোস্যাট চিত্র)

বাস্তো আরসিজিও, ইতালী (কার্টোস্যাট চিত্র)
বাস্তো আরসিজিও, ইতালী (কার্টোস্যাট চিত্র)


খ) সম্পদ নজরদারী: Resourcesat স্যাটেলাইটগুলি এর জন্য ব্যবহার হয়। এগুলি কৃষিজ, বনজ, খনিজ ইত্যাদি নানারকম সম্পদ নজরদারী ও গবেষণায় কাজে লাগে।
দমন অঞ্চল, ভারত
দমন অঞ্চল, ভারত 

গ) সাগর নজরদারী: Oceansat স্যাটেলাইটগুলি সমুদ্র পর্যবেক্ষণ ও সেই সংক্রান্ত গবেষণায় ব্যবহার হয়। (যেমন সমুদ্রস্রোত, সমুদ্রের ওপর বায়ুপ্রবাহ, ক্লোরোফিল ঘনত্ব, প্ল্যাঙ্কটন এর জন্ম ও নানারকম ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি)

আরবসাগরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন
আরবসাগরে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এর বিস্তার



বঙ্গোপসাগরে ক্লোরোফিল ঘনত্বের জন্য সেটেলাইট-২  উপগ্রহ সৃষ্ট মানচিত্র। 

ঘ) আবহাওয়া: INSAT উপগ্রহগুলি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে ব্যবহার হয়।
উপগ্রহ চিত্র
উপগ্রহ চিত্র  

ঙ) প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা: INSAT-3D, INSAT-3DR ইত্যাদি উপগ্রহ এইসব কাজে ব্যবহার হয়। উড়িষ্যা সুপার সাইক্লোনে ১০০০০ এর বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু আজ বড়জোর কয়েকজনের মৃত্যু ঘটে ওইধরণের দুর্যোগে। আক্ষরিক অর্থে আজ হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচায় মহাকাশ প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক কেরলের বন্যাতেও উদ্ধারকার্যে ব্যবহার হয়েছে ৫ টি স্যাটেলাইট।

কেদারনাথ অঞ্চলের ২০১৩সালের বন্যার আগের এবং পরের চিত্র  
ক) দূর-সংযোগ (telecommunication): TV, DTH সম্প্রচার, DSNG এবং VSAT এই স্যাটেলাইটগুলির ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। তাছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল ও দ্বীপগুলিতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতেও স্যাটেলাইট বড় ভরসা। বহুক্ষেত্রে মোবাইল ফোন যোগাযোগও স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই হয়।

খ) দূর-চিকিৎসা (tele-medicine): ISRO-র tele-medicine network ছড়িয়ে আছে ৩৮৪ টির বেশী চিকিৎসাকেন্দ্রে (যার মধ্যে ৬০ টি স্পেশালিটি হাসপাতাল, ৩০৬ টি প্রত্যন্ত/গ্রামীণ/জেলা/মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ১৮ টি চলমান টেলিমেডিসিন ইউনিট)। এর মাধ্যমে চিকিৎসক দূর থেকেই চিকিৎসা করতে করতে পারেন।
Tele medicine
Tele medicine 
গ) দূর-শিক্ষা (Tele-education): EDUSAT- ভারতের (ও বিশ্বের) প্রথম শিক্ষার জন্য নিবেদিত উপগ্রহ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সংযোগসাধন করেছিল এবং টিভি, ভিডিও কনফারেন্স, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে শিক্ষায় নতুন যুগ এনেছিল। ২০১০ সালে এটির আয়ু ফুরানোর পর এখন অন্যান্য কিছু দূর-সংযোগ উপগ্রহ (INSAT ও GSAT সিরিজের) এর কাজে নিযুক্ত।


) প্রতিরক্ষা: ভারতীয় সেনাবাহিনী অনেকগুলি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে (এই মুহূর্তে ১৪ টি)। এগুলির মধ্যে
i) অজানা অঞ্চলে পথ ও অবস্থান নির্ণয় ও বহুরকম অস্ত্রের দিশা নির্ণয় (IRNSS অর্থাৎ Indian Regional Navigation Satellite System- ৭ টি স্যাটেলাইট). [কার্গিল যুদ্ধে আমেরিকা GPS দিতে রাজী হয়নি বলে ভারত নিজেই এই সিস্টেম বানিয়েছে].
ii) ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা নৌসেনার জাহাজগুলির মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি (GSAT-7).
iii) বায়ুসেনার বিমান, রাডার ও স্টেশনগুলির মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি (GSAT-7A).
iv) সীমান্ত ও শত্রুপক্ষের অঞ্চলে নজরদারী (Cartosat series স্যাটেলাইটগুলি)
ইত্যাদি

৪, ৫) পথ ও অবস্থান নির্ণয় এবং পরিবহণ (Positioning, Navigation and transportation):
GAGAN (GPS -aided GEO augmented navigation)
GAGAN (GPS -aided GEO augmented navigation)

-এই সিস্টেম আমেরিকার থেকে পাওয়া GPS কে ভারতের জন্য আরও উন্নত ও সূক্ষ্ম করে তোলে।
IRNSS (Indian Regional Navigation Satellite System)
IRNSS (Indian Regional Navigation Satellite System)

এটি সম্পূর্ণ ভারতীয় সিস্টেম। আমেরিকা GPS বন্ধ করে দিলেও আমাদের ও আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে নিজস্ব GPS থাকবে।

এগুলি পরিবহণে (বিমানে, জাহাজে, গাড়িতে এমনকি পথে হাঁটার সময়ও) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ISRO আরও নানারকম প্রযুক্তি বানাচ্ছে যা পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ যেমন ট্রেনের অবস্থান তাৎক্ষণিকভাবে জানা, লেভেল ক্রসিং-এ স্যাটেলাইট নির্ভর অ্যালার্ম ব্যবস্থা যা প্রাণহানি কমাতে পারে ইত্যাদি।

নানাদেশ থেকে কাস্টমাররা আজকাল ভারতে আসছেন তাঁদের স্যাটেলাইট অর্থের বিনিময়ে উৎক্ষেপণ করবার জন্য। এখনও পর্যন্ত ৩২ টি দেশের ২৬৯ টি স্যাটেলাইট ভারত উৎক্ষেপণ করেছে। বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশ এই সম্মানের অধিকারী। তাছাড়া অন্যান্য নানা সার্ভিস ও উপগ্রহ চিত্র বিক্রি করেও ভারতের অনেক বিদেশী মুদ্রা আয় হয়। এই মুহূর্তে ISRO-সাথে ৪০০-রও বেশী ছোটবড় কোম্পানি ও স্টার্টআপ মহাকাশ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নির্মাণে যুক্ত। এতে দেশের সামগ্রিক শিল্প লাভবান হচ্ছে। বর্তমান ও ভবিষ্যতের যুগ মহাকাশের যুগ। আর তাতে প্রভাব রাখতে গেলে শক্তিশালী মহাকাশ ইন্ডাস্ট্রি থাকতেই হবে।

ভারত আজ নানাদেশের সাথে মহাকাশ সংক্রান্ত নানা প্রজেক্ট ও চুক্তি করতে পারছে শুধুমাত্র নিজের মহাকাশ দক্ষতার কারণে। সব দেশই বুঝছে মহাকাশ প্রযুক্তি ছাড়া ভবিষ্যৎ অচল। অন্তত নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকাটা তো আবশ্যিক। তাই অনেক দেশই যে গুটিকয়েক মহাকাশপ্রযুক্তিতে দক্ষ দেশ রয়েছে তাদের সাথে মিলে নিজেদের মহাকাশ সম্পদ বাড়াতে চাইছে। আমাদের পড়শি দেশ বাংলাদেশ সাম্প্রতিকে নিজেদের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ করেছে (ফ্রান্স ও আমেরিকার সহায়তায়)। এছাড়া মহাকাশ গবেষণার খরচ অনেক অনেক কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ও ছাত্রদের সাধ্যের আওতায় আসছে এবং ইলেকট্রনিক্সেরও বিপুল উন্নতি ঘটেছে ফলে তৈরি হচ্ছে প্রচুর ক্ষুদ্র স্যাটেলাইট। এইসব শিখতে, তৈরি করতে ও উৎক্ষেপণ করতে আমেরিকা, ফ্রান্স ইত্যাদির মত ভারতও বহু দেশের সাথে নানা চুক্তি সারছে।

এছাড়াও রয়েছে সরাসরি আন্তর্জাতিক কূটনীতি। একটি উদাহরণ হলঃ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত ‘দক্ষিণ এশিয়া স্যাটেলাইট’ যা ২০১৭ সালে লঞ্চ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় এটি ভারতের পক্ষ থেকে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফঘানিস্তানকে একটি ‘উপহার’। এর সাহায্যে এই দেশগুলির অনেক খরচ বাঁচবে ও মহাকাশ প্রযুক্তি শিখতে সহায়ক হবে। পরিবর্তে ভারত এই দেশগুলিতে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং স্টেশন বানাচ্ছে (এছাড়াও আছে ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, ফিজি ইত্যাদি দেশে) যা ভারতের Soft, Diplomatic ও Strategic power বৃদ্ধি করবে, বিশেষতঃ এশিয়া-পেসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষাপটে যা গুরুত্বপূর্ণ।

মহাকাশ অভিযান ও উদ্ভূত প্রযুক্তি, লব্ধ নতুন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, সম্মান ও ভরসা।

চন্দ্রযান-১ চাঁদে জল আবিষ্কার করেছে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। আরও অনেক নতুন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালিয়েছে।

মঙ্গলযান ভারতের প্রথম ভিনগ্রহে অভিযান। ভারত বিশ্বে চতুর্থ (দেশ হিসেবে তৃতীয়) হিসেবে অন্য গ্রহে পৌঁছেছে (আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন/রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান এর পর), বিশ্বে চতুর্থ (দেশ হিসেবে তৃতীয়) হিসেবে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছেছে (আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ এর পর), প্রথম দেশ হিসেবে প্রথম চেষ্টায় মঙ্গলগ্রহে পৌঁছেছে এবং সর্বনিম্ন বাজেটে, সর্বনিম্ন সময়ে ও সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানীদের সাহায্যে। এটা একটা বিরাট গর্বের ও আনন্দের ব্যাপার। এছাড়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানও চালিয়েছে।



 এর ফলে একদিকে যেমন বিশ্বমঞ্চে অনেক সম্মান মিলেছে তেমনই বিদেশের কাস্টমারদের ISRO-র ওপর ভরসাও অনেকগুণে বেড়েছে আর তাঁরা অনেকেই তাঁদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ISRO কে বেছে নিচ্ছেন।

সামগ্রিকভাবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা তরুণ প্রজন্ম ও শিশুদের কাছে খুব বড় অনুপ্রেরণা। তারা কৌতূহলী হচ্ছে, উৎসাহিত হচ্ছে, আলোচনা করছে, বিজ্ঞানচর্চার স্বপ্ন দেখছে…এই চিঠিটি একটি শিশু ISRO প্রধানকে মঙ্গল অভিযানের পরে লিখে পাঠিয়েছিল বড় হয়ে ISRO তে যোগদানের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন।

এই ৩ বছরের শিশুটি ISRO-র রকেট লঞ্চ দেখে মহাকাশকে ভালবেসে ফেলেছে আর এখন সে চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে আর ISRO-র লঞ্চ দেখার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। ইসরো প্রধান ড. সিভান নিজে তাই দেখে চমৎকৃত হয়েছেন।
এইসবের মূল্য কি টাকায় হয়??

এতসব বললাম। এইবারে ভাবুন তো, এতবড় লাভ কত টাকায়?

ভারতের অর্থনীতি (Nominal GDP) ২.৮৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার (বিশ্বে ষষ্ঠ) [GDP PPP হিসেবে ১০.৩৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার- বিশ্বে তৃতীয়] এবং গড়ে ৭% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারমধ্যে ISRO-র বাজেট ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে ছিল ১.৭ বিলিয়ন ডলার (৫০ বছরে সর্বোচ্চ) অর্থাৎ ০.০৬%। এটা কি খুউউব বেশী? যেখানে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশী অন্যান্য খাতে খরচ হয় এবং যেখানে ISRO বানিজ্যের মাধ্যমে নিজেই আয় করছে?

এখনো কি মনে হচ্ছে মহাকাশ গবেষণা অর্থের অপচয়।   
হতেই পারে না। এটি ‘অপচয়’ নয় বরং ‘লগ্নি’ (Investment)। অত্যন্ত ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ লগ্নি যা একদিন অনেকগুণে ফেরত আসে

পরিশেষে বলতে পারি,

প্রযুক্তিই উন্নয়ন আর সমৃদ্ধি আনে, উলটোটা নয়। অনেকে মনে করেন আগে দারিদ্র্য দূর হোক, পরে আধুনিক প্রযুক্তি হবে। ভুল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই মানুষকে এপ থেকে মানুষ বানিয়েছে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিই মানুষের সাথে অন্যান্য বন্য জন্তুদের মধ্যে তফাৎ। সুতরাং আমাদের সেই প্রয়াস বজায় রাখতে হবে। কারণ প্রজাতি হিসেবে এখনও অনেক পথ যাওয়া বাকী।


সেইসাথে আমাদের অভিযান চালিয়ে যেতে হবে, ছড়িয়ে পড়তে হবে। এককালে মানুষ আফ্রিকা থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এইভাবে আমাদের এরপর ছড়িয়ে পড়তে হবে মহাকাশেও। কারণ একটামাত্র গ্রহ নিরাপদ নয়। যেকোনো দিন এক বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় যেমন বিরাট উল্কাপাত, পারমাণবিক যুদ্ধ, মহামারী আমাদের প্রজাতিকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। সেইজন্য নিরাপদ ও দীর্ঘজীবি হতে আমাদের অন্যান্য গ্রহে, উপগ্রহে বসতি বিস্তার করতে হবে। এটা আজকে দাঁড়িয়ে অলীক কল্পনা মনে হলেও আগামী এক হাজার বছরে যে তা বাস্তব হয়ে দাঁড়াবে না কে বলতে পারে? ১০০ বছর আগেও মানুষ মহাকাশে রকেট পাঠায়নি, আজ কিন্তু মহাকাশে (আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন) মানুষ কয়েকমাস থাকতে পারে! তাই অন্তত চাঁদ ও মঙ্গলে বসতিবিস্তারের চেষ্টা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা প্রয়োজন।


দেখো মহাকাশ হাতছানি দিচ্ছে।

জাতীর উন্নতির স্বার্থে এবং সর্বোপরি সমগ্র মানবজাতির স্বার্থে আমাদের তার ডাকে সাড়া দিতেই হবে। 

Comments

Popular posts from this blog

৩০ টি জনপ্রিয় লেখকের উপন্যাস || যাদের উপন্যাস পড়লে আপনাকে মুগ্ধ করবে।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরিবার কেন পাকিস্তানে থাকে?