৩০ টি জনপ্রিয় লেখকের উপন্যাস || যাদের উপন্যাস পড়লে আপনাকে মুগ্ধ করবে।


৩০ টি জনপ্রিয় লেখকের উপন্যাস  

১. কালীপ্রসন্ন সিংহ- হুতোম পেঁচার নকশা
২. প্যারিচাঁদ মিত্র- আলালের ঘরের দুলাল
আমার মতে, হুতোম পেঁচা বা আলাল তালিকায় এসেছে সাহিত্যের ইতিহাসের বিবেচনায়। আলাল ফর্মের দিক থেকে প্রি-উপন্যাস। আর হুতোম নকশা বা মিশ্র রচনা। বাংলা উপন্যাসের শুরু দুর্গেশনন্দিনী দিয়ে। ফলে ১ ও ২ বাদ যাওয়া উচিত।
৩. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- বিষবৃক্ষ, দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, কৃষ্ণকান্তের উইল
বঙ্কিমের উপন্যাস এখনও সুখপাঠ্য এবং সিরিয়াস রচনা। একটা যুগের চিত্র, সাহিত্যি মানসিকতা সেগুলো ধারণ করে। কাব্যগুণেও সেগুলো দারুণ। আমার মতে, বঙ্কিমবাবুর দুর্গেশনন্দিনী-কপালকুণ্ডলা-কৃষ্ণকান্তের উইলের চাইতে বিষবৃক্ষ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রোমাঞ্চের অবাধ প্রবাহ থেকে নেমে বিষবৃক্ষ কিছুটা বাস্তবধর্মী, ফলে অনেকটাই উপন্যাস।
৪. মীর মশাররফ হোসেন- বিষাদসিন্ধু
বিষাদসিন্ধু কি উপন্যাস? বহুকাল বাঙালি মুসলমানের ঘরে ঘরে বিষাদসিন্ধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পঠিত হয়েছে। এটি ধরনের দিক থেকে ইতিহাস। কিন্তু এর কাব্যভাব, কল্পনার অবাধপ্রবাহ ও কাহিনীর প্রতি এর ঝোঁক বিবেচনায় নিলে একে উপন্যাসই বেশি মনে হয়।
৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- গোরা, চোখের বালি, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, চতুরঙ্গ
জনপ্রিয়তার দিক থেকে ঠাকুরের শেষের কবিতা নিতে হয়। উপন্যাসের ব্যকরণ মানলে চোখের বালি বা যোগাযোগ বা চতুরঙ্গ। কিন্তু আমি বলবো- গোরা। একটি জাতির আত্মআবিষ্কারের প্রশ্ন নিয়ে কোনো বাংলা উপন্যাস কাজ করেছে বলে আমি জানি না। গোরা ভিন্ন।
৬. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়- চরিত্রহীন, দেবদাস, শ্রীকান্ত, শেষপ্রশ্ন, পরিণীতা, বিন্দুর ছেলে
শরৎচন্দ্রের উপন্যাস বাছাই করতে দিলে আমি গৃহদাহ রাখবো। কিন্তু গৃহদাহ বোধহয় সবচেয়ে কম পঠিত। সেই দিক থেকে বাংলার কাল্ট দেবদাস থাকতে পারে।
৭. বেগম রোকেয়া- মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন
রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্ন নারীবাদীদের ধর্মগ্রন্থের মতো।
৮. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়- আরণ্যক, অপুর সংসার, পথের পাঁচালী, চাঁদের পাহাড়
বিভূতির সমালোচনা করতে গেলে সত্যজিৎ এসে পথরোধ করে দাঁড়ান। কোনটি নেওয়া যায় আমি নিশ্চিত নই।
৯. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়- পদ্মানদীর মাঝি, পুতুল নাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, চিহ্ন, অহিংসা, জননী
অবশ্যই পুতুল নাচের ইতিকথা।
১০. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়- হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, নাগিনী কন্যার কাহিনী, কবি, আরোগ্য নিকেতন, গণদেবতা
বোদ্ধা পাঠক কালিন্দীর কথা বলেন। জলসাঘর নিয়ে সত্যজিতের ব্যাখ্যাও তো চমৎকার। কবি আবেগপ্রবণ বাঙালির প্রথম পছন্দ। গণদেবতা-পঞ্চগ্রামের কথাও কেউ বলবেন। কিন্তু আমি বলবো হাঁসুলি বাঁকের উপকথা। তারাশঙ্করই প্রথম শহরের জাতীয়বাদী আন্দোলনের গ্রামযাত্রা খেয়াল করেছিলেন। ফল ভারতের স্বাধীনতা ও নতুন ক্ষমতাসম্পর্কও।
১১. জীবনানন্দ দাশ- কারুবাসনা, মাল্যবান
জীবনানন্দের উপন্যাস আমি পড়ি না। আত্মজীবনী মনে হয়। একজন সফল কবির ব্যর্থ আত্মজীবন নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। আমার মতে জীবনানন্দ এই লিস্টে না থাকুন।
১২. কাজী নজরুল ইসলাম- মৃত্যুক্ষুধা
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা উপন্যাস ছাড়া এর কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে হয় না।
১৩. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী : বেনের মেয়ে
চর্যাপদ নিয়ে চর্যাপদের আবিষ্কারকের লেখা উপন্যাস। সাহিত্যের ইতিহাসের ছাত্র ছাড়া এ উপন্যাস নিয়ে অন্য কারো আগ্রহ থাকার কথা নয়।
১৪.কমলকুমার মজুমদার- অন্তর্জলী যাত্রা, সুহাসিনীর পমেটম, নিম অন্নপূর্ণা, গোলাপ সুন্দরী, খেলার প্রতিভা
নিম অন্নপূর্ণ বা খেলার প্রতিভা কেমনে এই তালিকায় আসে? এগুলো তো গল্প। অন্তর্জলী যাত্রার পক্ষে আমার ভোট।
১৫. অদ্বৈত মল্লবর্মণ- তিতাস একটি নদীর নাম
১৬. বুদ্ধদেব বসু- রাত ভর বৃষ্টি, তিথিডোর
রাত ভর বৃষ্টি। ছোট কিন্তু ভয়ংকর।
১৭. সমরেশ বসু- প্রজাপতি, গঙ্গা, মোক্তার দাদুর কেতু বধ
গঙ্গায় ভোট দিলাম।
১৮. কাজী ইমদাদুল হক- আবদুল্লাহ
মুসলমানের লেখা উপন্যাস। অসম্পূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত প্রশংসা করেছেন। মুসলমানের ঘরের কথা প্রথম মুসলমানের মুখেই সাহিত্যে এসেছে। তবু এই উপন্যাস পক্ষে নই আমি।
১৯. সৈয়দ মুজতবা আলী- শবনম
২০. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ- লালসালু, কাঁদো নদী কাঁদো, চাঁদের অমাবশ্যা
লালসালুতে সৈয়দ উয়ালীউল্লাহ একজন সুন্নী মুসলমান। ফরায়েজী চেতনা ও ফরাসি চেতনা মিলে বাংলার মুসলমানের ইতিহাসের সর্বনাশ করেছে এই উপন্যাস। বরং অন্য দুটি ভাল।
২১. শওকত ওসমান- ক্রীতদাসের হাসি, জলাঙ্গী, জননী
২২. আশাপূর্ণা দেবী- সুবর্ণলতা, প্রথম প্রতিশ্রুতি
২৩. মহাশ্বেতা দেবী- হাজার চুরাশির মা, চোট্টি মুণ্ডা ও তার তীর, অরণ্যের অধিকার
মহাশ্বেতা দেবীকে আমার প্রোপাগান্ডা লিটারেচার মনে হয়। পড়তে পারি না।
২৪. নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়- উপনিবেশ
২৫. সতীনাথ ভাদুড়ী- ঢোঁড়াই চরিত মানস
সতীনাথ দুষ্পাঠ্য। জাগরী আমি পড়তে পারি নাই, ঢোঁড়াই দূরের কথা।
২৬.প্রমথনাথ বিশী- কেরী সাহেবের মুন্সী
২৭. বিমল মিত্র- কড়ি দিয়ে কেনা, সাহেব বিবি গোলাম
২৮. যাযাবার-দৃষ্টিপাত
দৃষ্টিপাত উপন্যাস নয়। বাদ যেতে পারে।
২৯. ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়- লুলু, কংকাবতী, ডমরু-চরিত
ডমরু-চরিত পোস্টমডার্ন, কংকাবতী ম্যাজিক রিয়্যালিজম। বাকীগুলো বিশ শতকের রোমাঞ্চ।
৩০. মৈত্রেয়ী দেবী- ন হন্যতে
ন হন্যতে দেখে অনেকে লা নুই বেঙ্গলি রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। হাহাহা। উপন্যাসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ উপন্যাস লেখা হলেও চমৎকার।

Comments

Popular posts from this blog

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরিবার কেন পাকিস্তানে থাকে?